মোঃ মমিন আলী
বিশেষ প্রতিনিধি এডিপি বাংলা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ললিতপুর গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক পরিবারকে দুইবছর ধরে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বছর দুর্গাপূজায় পরিবারের কাউকেই মণ্ডপে যেতে দেওয়া হয়নি। এতে দুর্গাপূজার আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারেননি পরিবারটি।
পরিবারটির অভিযোগ, এবারেও দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয়নি। মণ্ডপে যেতেও বারণ করে দেওয়া হয়েছে। সমাজপতিদের এমন আচরণে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন তারা।
ভুক্তভোগী সুশীল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে গ্রামের সমাজপতিরা আমাদের একঘরে করে রেখেছে। গ্রামের লোকজনকে একাধিকবার ডেকে বিষয়টি নিম্পত্তির জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। গত বছর দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য আমার কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি। এমনকি মণ্ডপে যেতেও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল।’
সুশীল চন্দ্র মণ্ডল আরও বলেন, বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে গ্রামের সমাজ দুইভাগ বিভক্ত হয়ে গেছে। নতুন সমাজে আলাদাভাবে পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও আমাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। গ্রামের সমাজপতিদের এমন আচরণে গত বছর শারদীয়া উৎসবের আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারিনি। এবারও হয়তো হবে না।’
আজ শুক্রবার সরেজমিনে ললিতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের প্রবেশের একটু দুরেই রাস্তার ধারে নতুন মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি চলছে। গ্রামে ১৩ পরিবার যে নতুন সমাজ গঠন করেছে তারাই নির্মাণ করছেন এটি। তার অদুরেই রয়েছে গ্রামের সার্বজনীন মন্দির। গ্রামের একবারে শেষ প্রান্তে রয়েছে সুশীল চন্দ্র মণ্ডলের বসতবাড়ি।
ললিতপুর দুর্গামণ্ডপ কমিটির সভাপতি পলাশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজন দুইদিন সালিসের আয়োজন করেছিল। কিন্তু সুশীল মণ্ডল সেখানে উপস্থিত হননি। গ্রামের লোকজনের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় সমাজপতিদের সিদ্ধান্তে তাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। গ্রামে এ বছর আলাদা সমাজ হয়েছে সেখানে সুশীল মণ্ডল পূজা করছে কিনা আমার জানা নেই।’
উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহবায়ক কুমার বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘সুশীল মণ্ডলকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এটি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মান্দা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর দুই মণ্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। সুশীল মণ্ডল যাতে দুর্গাপূজার আচার অনুষ্ঠান করতে পারেন সেবিষয়ে তাদের বলে দেওয়া হয়েছে।’#