জুয়েল শেখ জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি
গ্রামীণ পিঠার ঐহিত্য ধরে রাখতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে দুই দিনব্যাপী গ্রামীণ পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে। নানা ধরনের গ্রামীণ পিঠার স্বাদ নিতে দুই দিনের এই পিঠা উৎসবে সব বয়সী মানুষের ভিড় জমেছে। আয়োজকরা বলছেন, বাঙালির পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও খুদে শিক্ষার্থীদের গ্রামীণ পিঠার সঙ্গে পরিচয় করাতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে পিঠা উৎসবে আগত দর্শনাথীরা এমন উৎসবে বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ পিঠার নাম শুনে ও দেখে আপ্লুত তারা। মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পাঁচবিবি থিয়েটারের আয়োজনে এই গ্রামীণ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী।
উৎসবে অংশগ্রহণ কারী পৌষালী পিঠা কুঁঠিরের মাকছুদা পারভীন বলেন,এক সময় শীতকালে বাঙালির ঘরে ঘরে মুখরোচক পিঠাপুলির আয়োজন করা হতো। তবে কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির সেই গ্রামীণ পিঠার ঐতিহ্য। তবে দীর্ঘদিন পর হলে পৌর মেয়রের উদ্যোগে এমন পিঠা উৎসব আয়োজনে আমরা অনেক খুশি।
সাধের পিঠাওয়ালী স্টলের দোকানী বলেন, আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পিঠাপুলি হরেক রকম ফাস্ট ফুডের বাহারী খাবারের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। দীর্ঘদিন পর হলেও পৌর মেয়র পাঁচবিবিতে এমন পিঠা উৎসবের আয়োজনে সেই আগের ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে এনেছে।
ননদ ভাবী পিঠা ঘরের দোকানী শিফা বলেন, উৎসবের প্রথম দিনেই মানুষের উপচে পড়া ভীড় ও সেই সাথে অনেক পিঠা বিক্রি হচ্ছে।
পিঠা উৎসব দেখতে আসা মেহেদী হাসান জানান, এখানে বিভিন্ন রকমের পিঠার সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি কিনে খেলাম। সেগুলোর স্বাদ অতুলনীয়। প্রতি বছর এমন আয়োজন হলে আমাদের শিশুরা গ্রামীণ ঐতিহ্য পিঠাপুলির নাম মনে রাখবে।
জয়পুরহাট সদর থেকে পিঠা উৎসবে আসা এক তরুনী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পিঠা উৎসবের টানেই এখানে ছুটে আসা। এখানে নতুন নতুন অনেক নামের পিঠার সাথে পরিচিত হলাম এবং উৎসবে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
পাঁচবিবি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নাসরিন আকতার জুন বলেন, গ্রামের ঐতিহ্য পিঠাপুলির নাম দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। এরকম আয়োজন না হওয়ার কারণে বর্তমান সময়ের ছেলে মেয়েরা এক রকম ভুলেই যেতে বসেছিল গ্রামের পিঠাপুলির নাম। তবে পৌর মেয়র এমন আয়োজনের মাধ্যমে গ্রামের ঐতিহ্যকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন।
পিঠা উৎসবের আয়োজক পাঁচবিবি থিয়েটারে সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,উদ্বোধনের পর থেকেই পিঠা উৎসবে আসছেন নানান বয়সী মানুষ। সঙ্গে নিয়ে আসছেন তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের। পিঠা উৎসবে শুরুর পর থেকেই উপচেপড়া ভিড়। এ যেন সকলের অংশ গ্রহনে মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।
স্টলগুলোতে তারা নিচ্ছেন হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ পিঠার স্বাদ।’
তিনি আরো বলেন, এই পিঠা উৎসবের আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের হারিয়ে যাওয়া পুরনো পিঠার ঐহিত্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে খুদে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষদের গ্রামীণ পিঠার সঙ্গে পরিচয় করানোর চেষ্টা করছি।
এবারের পাঁচবিবি পৌর পার্কে পিঠা উৎসবে ৯টি স্টলে ধান সেমাই,ভাপা,পুলি দুধ,পুলি, পাটিসাপটা , ঝিনুক পুলি, জামাই সোহাগী, গোলাপ, কানমুচুরি, পুডিং, পায়রা, তেল পিঠা,দুধ চিতাই, মুঠা পিঠা, ক্ষীর,রসগোল্লা, কেক, গোলাপ ফুল, তেলেভাজা রসপিঠা, রোল পিঠা, লাভ পিঠা, শিম ফুল পিঠা, ডালবড়া, নারিকেল পিঠা, নকশি পিঠা, নয়নতারা পিঠা, ইলিশ পিঠাসহ অর্ধ শতাধিক পিঠার পসরা সাজানো হয়েছে। পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।
পিঠা উৎসব উদ্বোধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল শহীদ মন্ডল মুন্না, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা সুলতানা, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মারুফ আফজাল রাজন, জাতীয় রবীন্দ্রসম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাবুল, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সাঈদ আল মাহবুব চন্দন, প্যানেল মেয়র নূর হোসেন, বালিঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোশাইদ আল আমিন সাদ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান রাজু ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলফিকার চঞ্চল সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।