স্টাফ রিপোর্টারঃ
বগুড়ায় গতকাল দুপচাঁচিয়ায় উপজেলার উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) হাত খরচের টাকা নিয়ে বিরোধে জের ধরে তারই আপন ছোট ছেলে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯) মাকে হত্যা করে তার লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়। পরে কুড়াল দিয়ে আলমারি কুপিয়ে ডাকাতির চেষ্টা বলে নাটক সাজিয়ে বাসায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনার পর ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে র্যাব-১২ ছায়া তদন্ত শুরু করে। সেই সূত্র ধরে তথ্য পাওয়া যায় যে, মায়ের কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে র্যাবে-১২ নিকট স্বীকারোক্তি প্রদান করেন তিনি।
গ্রেফতারকৃত সাদ বিন আজিজুর রহমান দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার কামিল শ্রেণির ছাত্র এবং একই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের ছেলে। এই ঘটনায় এলাকায় ডাকাতিসহ হত্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে। তৎপর র্যাব-১২ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং রহস্য উদঘাটন শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে কাহালু থানার আগোবাড়ি গ্রামে দাদার বাড়ী থেকে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
অপরদিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত সাদ বিন আজিজুর রহমান জানায়, মায়ের কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নেয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে মা উম্মে সালমার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। বাসা থেকে প্রায় দিনই ৫শ থেকে ১হাজার টাকা হারিয়ে যেত। এনিয়ে মা তাকে বকাবকি করতো। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন সকালে তার মা উম্মে সালমা খাতুনের সঙ্গে হাত খরচের টাকা নিয়ে কথার কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাঁটির সৃষ্টি হয়। এতে সাদ বিন আজিজুর রহমান রাগ করে সকালের নাস্তা না খেয়ে দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসায় ক্লাস করার উদ্দেশ্যে চলে যায়। মাদ্রাসায় বেলা ১১টায় ক্লাসের বিরতি হলে বাসার কাছাকাছি এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং আনুঃ সাড়ে ১২টার সময় বাসায় যায় এবং দেখতে পায যে, তার মা বাসায় বটি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি কাটাকাটি করছে।
এদিকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তার মায়ের পেছন দিক থেকে নাক-মুখ চেপে ধরে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার মা বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে হাতের তর্জনী আঙুলের নিচে তরকারি কাটার বটি লেগে হালকা কেটে যায়। পরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নাক-মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ভিকটিমের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তার মাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে ডাকাতির চেষ্টা বলে পরে সাদ বিন আজিজুর রহমান মায়ের লাশের দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজের ভেতর রেখে ঢাকনা লাগিয়ে দেয়। ঘটনাটি ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজানোর জন্য বাসায় থাকা কুড়াল দিয়ে তার বাবা এবং মায়ের বেড রুমে থাকা আলমারিতে কয়েকটি কোপ মেরে কুড়াল সেখানে রেখে বাসার মেইন গেটে তালা দিয়ে বের হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরে সে নিজেই আবার মেইন গেটের তালা খুলে বাসায় প্রবেশ করে তার বাবা আজিজুর রহমানকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, মাকে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। কথা বলার ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই আজিজুর রহমান বাসায় চলে আসে এবং বাসায় কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শ্বশুর বাড়ীতে ফোন করে। ফোন পেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে লোকজনসহ প্রতিবেশী আরও অনেকেই বাসায় আসলে সাদ বিন আজিজুর রহমান সু-কৌশলে তার বাবা এবং দুই মামাকে দিয়ে ছাদে এবং বাসার ভেতরে সমস্ত জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার অভিনয় শুরু করে।
একপর্যায়ে সাদ বিন আজিজুর রহমান নিজ হাতেই ডিপ ফ্রিজের ঢাকনা খুলে মায়ের লাশ বের করে। এরপর ডাকাত দল এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সবাইকে জানায়। এছাড়াও গত রবিবার উপজেলার ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূ উম্মে সালমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের স্বামী দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমান। তাদের ৩ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে এবং মেয়ে ঢাকায় বসবাস করে। ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান বাবা-মার সঙ্গে থাকতো।
এবিষয়ে র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানী কমান্ডার (মেজর) এহতেশামুল হক খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং জানায় যে, উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত বিধি-ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিকটস্থ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।