স্টাফ রিপোর্টারঃ
বগুড়া জেলার অধিকাংশ আলুর ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে লেটব্লাইট রোগ যার কারণে কৃষকরা আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ওষুধের আশ্রয় নিতে হচ্ছে প্রায় কৃষকদের। একদিকে আলু চাষে খরচ বাড়ছে আর অন্যদিকে উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে তারা। এদিকে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ বলছে,জমিতে বিক্ষিপ্ত আকারে আলুর গাছ আক্রান্ত হয়েছে। তাতে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রার কোন ব্যাঘাত বা ঘাটতির উপর কোন প্রভাব পড়বে না। বগুড়া জেলার প্রায় উপজেলায় কম-বেশি আলুর ফসল হয়ে থাকে। তবে তার মধ্যে শিবগঞ্জ,নন্দীগ্রাম,কাহালু,শাজাহানপুর উপজেলায় এই আলুর ফসলের পরিমাণ তুলনা মূলক বেশি হয়ে থাকে। ঘন কুয়াশা দেখা দেয়ায় লেটব্লাইট রোগ বড় আকারে দেখা দেয়নি তবে অনেকটা প্রভাব পড়েছে। তাই প্রায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আলুর জমিতে বিক্ষিপ্ত আকারে আলুর গাছ আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। একাধিক ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়,যেমন আজমল হোসেন জানায়,এখন এই রোগ দেখা দেয়ায় বাড়তি খরচের ঝামেলায় পড়েছে তিনি। গত কয়েক দিনের শৈত প্রবাহে আলুর গাছে লেটব্লাইট রোগ দেখা দেয়ায়। ইতি মধ্যে আলু গাছে পচন ধরেছে। গাছের বয়স ৪০ থেকে ৪৫ দিন তবুও ওষুধ স্প্রে করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আলুর গাছ মরে গেলে চাষীদের বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়াও জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক জানায়,আলুর ফসলে ছত্রাক-নাশক ওষুধের পেছনে বেশি খরচ করতে হয়। জমি ভেদে ০৩ থেকে ০৫ বার এই ওষুধ দিয়ে থাকে কৃষকরা। জমিতে আলু তোলার আগ পর্যন্ত তিন হাজার টাকার মতো প্রায় খরচ হয়। এবার তা সম্ভবত ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে বলে মনে করছে এই কৃষক। অপরদিকে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,বগুড়া জেলায় এবার প্রায় ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। যেখান থেকে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত মৌসুমে এই জেলায় আলুর উৎপাদন হয়ে ছিল প্রায় ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর। আর উৎপাদন হয় প্রায় ১২ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিকটন। আলুর উৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত জেলা ধরা হয় বগুড়াকে। আলুর জন্য শীত উত্তম আবহাওয়া। কিন্তু ঘন কুয়াশা ও তাপমাত্রা হঠাৎ কম-বেশি হলে ছত্রাক-জাতীয় রোগ লেটব্লাইটের আক্রমণ ঘটে। মূলত এটা ছাড়া আলুর আর তেমন কোনো রোগ দেখা যায় না। সাধারণত কুয়াশার সময় আলু চাষে সপ্তাহে একবার ছত্রাক নাশক ছিটাতে হয়। বর্তমানে ঘন কুয়াশার কারণে তা একাধিকবার ছিটাতে হচ্ছে। এবিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) নাজমুল হক মণ্ডল জানান,তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার জন্য এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। শীত আর ঘন কুয়াশা কমে গেলেই এই রোগের প্রকোপ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। সব মিলিয়ে বগুড়া জেলায় সর্বোচ্চ ৫০০ হেক্টর জমির আলুর গাছ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ভাবে পরামর্শ দিচ্ছে ভুক্তভোগী কৃষকদের।