প্রতিনিধি: মোঃ সাইদুর রহমান অনিক
সময়: ২১ টা ৫৪ মিনিট, ৯ জানুয়ারি ২০২৪
মেঝেতে সন্তানের রক্তের দাগ, দায় এড়াতে ‘পিরিয়ডের’ অজুহাত মায়ের!
নিজের চার বছর বয়সী শিশু সন্তানকে হত্যার পর মরদেহ একটি ব্যাগে ভরে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন এক নারী। তবে শেষরক্ষা হয়নি, ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে। এরপরই হত্যার দায় এড়াতে নানা ধরনের দাবি করেছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নিজের ছেলের মরদেহ-ভর্তি ব্যাগসহ সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে সূচনা শেঠ নামে ওই নারীকে। তিনি বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্টার্টআপ ‘মাইন্ডফুল এআই ল্যাব’ এর সিইও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোয়ায় যে হোটেল রুমে সূচনা তার সন্তানকে হত্যা করেছে সেখানকার মেঝেতে রক্তের দাগ পায় পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সূচনা দাবি করেন, ওই সময় তার ‘পিরিয়ড চলছিল’।
এদিকে মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে হত্যার পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে স্বামী ভেঙ্কট রমনের সঙ্গে সূচনার সম্পর্ক বিচ্ছেদের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
উত্তর গোয়ার পুলিশ সুপার নিধিন ভালসান স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তাদের (সূচনা-ভেঙ্কট দম্পতির) বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
জিজ্ঞাসাবাদের সময় সূচনা পুলিশকে জানিয়েছেন, তার স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন ছিল এবং আদালতের আদেশে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নিধিন বলেন,
ঘটনার সময় সূচনার স্বামী ইন্দোনেশিয়ায় ছিলেন। আমরা তাকে হত্যার বিষয়ে জানিয়েছি এবং তাকে ভারতে ফিরে আসতে বলেছি।
এছাড়া প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন ওই নারী।
সোমবার সকালে উত্তর গোয়ার ক্যান্ডোলিমের একটি হোটেলের অন্তর্গত সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট থেকে চেকআউট করেন সূচনা। হোটেল থেকেই ঠিক করে দেয়া স্থানীয় একটি ট্যাক্সিতে চড়ে তিনি বেঙ্গালুরু রওনা দেন। কিন্তু তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পর তার রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে মেঝেতে রক্তের দাগ দেখতে পান হোটেলের কর্মীরা। বিষয়টি তারা হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পুলিশকে জানান।
ঘটনাস্থলে আসার পর হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, সূচনা সকালেই বেঙ্গালুরু ফেরার কথা জানান। হোটেল থেকে তাকে বিমানের টিকিট করে দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু হোটেলের ম্যানেজারের দাবি, সূচনা ট্যাক্সি করেই বেঙ্গালুরু ফিরতে চান। পরে তাকে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে দেয়া হয়। ব্যাগপত্র নিয়ে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন সূচনা।
পুরো ঘটনা শোনার পর তদন্তে নামে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সূচনা যখন হোটেল ছাড়ছিলেন তখন সঙ্গে তার ছেলে ছিল না। এরপর পুলিশ সূচনাকে ফোন করে ছেলের কথা জানতে চাইলে সূচনা জানান, ফতোরদায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে ছেলেকে রেখে তিনি জরুরি কাজে বেঙ্গালুরু ফিরছেন। বন্ধুর নাম, ঠিকানাও পুলিশকে দেন সূচনা। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোটাই ভুয়া। সেখানে ওই নামে কেউ থাকেনই না।
এরপর পুলিশ যোগাযোগ করে সূচনার ট্যাক্সির চালকের সঙ্গে। তাকে পুরো ঘটনা পুলিশ জানায়। স্থানীয় কোঙ্কনি ভাষায় চালক পুলিশকে জানান, তিনি কর্নাটকের চিত্রদূর্গা জেলায় প্রবেশ করেছেন। নিকটবর্তী থানায় যেন গোয়া পুলিশ কথা বলে রাখে, তিনি সূচনাকে নিয়ে সেখানেই পৌঁছাচ্ছেন। সূচনাকে টের পেতে না দিয়ে চালক সোজা আইমঙ্গলা থানায় গাড়ি নিয়ে চলে যান।
সেখানে যাওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে কোনো তথ্যই জাননানি সূচনা। পরে তার ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। ব্যাগ খুলতেই এর ভেতর তার চার বছরের ছেলের রক্তাক্ত মরদেহ দেখা যায়।
এরপরই পুলিশ সূচনাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হোটেলের সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং ফরেনসিক দল আলামত সংগ্রহ করেন।