মোঃ লাভলু ইসলাম প্রাবন।
শেরপুর প্রতিনিধিঃ
বাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা বসেছিল শেরপুরে। শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেরপুর পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের নবীনগর মহল্লার রৌহা বিলে বসেছিল এ মেলা। স্থানীয় নবীনগর এলাকাবাসী শত বছর ধরে এ মেলার আয়োজন করে আসছে।
মেলায় বিভিন্ন পিঠা, মিষ্টি, সাজ, মুখরোচক খাবারসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মজাদার খাবারের পসড়া বসে।
শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালার দোকানের পসড়াও সাজিয়ে বসে দোকানীরা। বেচা বিক্রিও হয়েছে বেশ। মেলায় গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় জমায়।
এদিকে মেলার আশাপশে স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসব।
এ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দুর-দুরান্তের আত্মীয়রা ছুটে আসে পিঠার স্বাদ নিতে এবং মেলা দেখতে। মেলা উপলক্ষে মেয়ে জামাইরা আসেন শ্বশুর বাড়িতে। মেলা থেকে বাজারের রসদ দিতে জামাইকে শ্বশুড় বাড়ি থেকে দেওয়া হয় নগদ টাকা।
জানা গেছে, একসময় বাঙালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পূর্ব পুরুষদের রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রামের মানুষ ভোরে উঠে হলুদ ও সরিষা বাটা দিয়ে গোসল করতেন এবং বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত থাকেন পিঠা-পায়েস তৈরিতে।
দিনব্যাপী চলতো অতিথি আপ্যায়ন এবং বিকেলে সবাই ছুটে যেতেন মেলার মাঠে। এখন অবশ্য ওসবে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে মানুষের ভিড় বেড়েছে।
মেলায় গাঙ্গি খেলা (কুস্তি) ও সাইকেল রেস, চেয়ার খেলা, বালিশ খেলা, সুই-সুতা খেলাসহ ১৫ রকমের খেলার আয়োজন ছিল। সব চেয়ে আকর্ষনীয় ছিল ঘোড় দৌড় প্রতিযোগীতা।
জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে আসে অর্ধশত ঘোড় সোরোওয়ার। ঘোড়া সারোওয়ারদের ঘোড়ার দৌড় এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আনন্দ দিয়েছে।
খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন শেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলার মো. নজরুল ইসলাম। পৌর শহরের অদূরে এ মেলার আয়োজন করা হলেও ঐতিহ্যগতভাবে কোনো রকম প্রচারণা চালানো ছাড়াই উপচে পড়া ভিড় হয় মেলায়। কত বছর পূর্বে এ মেলার প্রচলন হয়েছিল তা কেউ সঠিক করে বলতে না পারলেও প্রায় একশত বছরের উপরে চলছে এই আয়োজন।
এ মেলা মূলত ৩০ পৌষ বা ১৩ জানুয়ারী অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তির মেলা হলেও এবার মেলার স্থানে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ করার জন্য মাঠ তৈরি ও সংসদ নির্বাচনে’র জন্য সময় এগিয়ে আনা হয়।
মেলার প্রধান আয়োজক পৌর কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, খেলার স্থান, আকাশ সংস্কৃতি বৃদ্ধি ও যান্ত্রিক জীবনে সময় কমে যাওয়ায় বাঙালির নিজস্ব বিনোদন হারিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগীতা শুরু হলেও ঐতিহ্য ধরে রাখতেই শত বছর ধরে এই আয়োজন চলে আসছে। পরবর্তী বংশধররাও এই এতিহ্য ধরে রাখবে আশা করি।