মাগুরা মহম্মদপুরের রাজাপুর বাজারে গত ২৫ নভেম্বর রাতে গোবিন্দ সাহা (৭০) নামের এক বৃদ্ধ’কে কুপিয়ে আহত করে বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী কেষ্ট সাহার নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী।গোবিন্দ সাহা বাজারের পাট ব্যবসায়ী গোপাল সাহা’র বাবা।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,কেষ্ট সাহা ও গোপাল সাহা’র মাঝে সম্প্রতি বাজারের একটি ঘরসহ জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।গোপাল সাহা ঘটনার কিছুদিন আগে কেষ্ট সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করে তালা ঝুলিয়ে দেয় পরবর্তীতে কেষ্ট সাহা মহম্মদপুর থানায় গোপাল সাহা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উল ইসলাম বিরোধ নিষ্পত্তি করতে মহম্মদপুর থানায় উভয় পক্ষের লোকজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে শালিস করে সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেন এবং ঘটনা প্রায় সমাধান হওয়ার মতো অবস্থানে চলে আসে।এরইমধ্যে হঠাৎ ২৫ নভেম্বর (শনিবার) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে গোপাল সাহা ও কেষ্ট সাহার মাঝে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয় একপর্যায়ে সেটি হাতাহাতির পর্যায়ে পৌছালে ঘটনার খবর পেয়ে গোপাল সাহা’র বাবা গোবিন্দ সাহা বাজারে এসে কেষ্ট সাহার ঘরের সামনে গেলে,শিমুল সাহা ওরফে গোপাল সাহা, কেষ্ট সাহা ও তার ভাই এবং ভাতিজারা গোবিন্দ সাহা’র মাথায় আঘাত করে সাথে সাথেই গোবিন্দ সাহা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।তখন বাজারের লোকজন এসে গোবিন্দ সাহা’কে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে সেখানের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫ টায় তার মাথার ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচার করেন।তারপর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন।৫ দিন আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ৮ টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুর চার দিন পর ৪ ডিসেম্বর সোমবার রাতে মহম্মদপুর থানায় উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১০ জন’কে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের পুত্র গোপাল সাহা।মামলায় ৫/৬ কে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান গোবিন্দ সাহাকে যখন আঘাত করা হয়েছিলো তখন কেষ্ট সাহা ও তার ভাই এবং ভাতিজারা ছাড়া অন্য কেউকে তারা ঘটনাস্থলে দেখেনি।কিন্তু মামলার এজাহারে দেখা গেছে সাক্ষীদের স্বীকারোক্তির বাইরে ও ৪ জন নিরীহ সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে। যার ফলে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাকিরুল ইসলাম খাঁন বলেন,ঘটনার সময়ে আমি মাগুরা শহরে ছিলাম,মোবাইল ফোনে ঘটনাটি শুনে আমি এলাকায় আসি এবং সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে অনুরোধ করি। আশপাশের ব্যবসায়ীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা জানতে পারি। ওই সময়ে উপস্থিত লোকজন বলেন কেষ্ট সাহা ও তার পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ এই ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলো না।
প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানদার উত্তম বলেন,ঘটনার সময় উভয় পক্ষের ৪ জন করে মোট ৮ জন পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করে,১ নং আসামি শিমুল ওরফে গোপাল সাহা বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করলে গোবিন্দ সাহা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এঘটনায় মামলার এজাহার ভুক্ত সাক্ষী বাজারের মিষ্টি দোকানদার সজীব ঘোষ বলেন,মারামারির খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই, সেখানে গিয়ে দেখি গোবিন্দ সাহা মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।সেখানে কেষ্ট সাহার পরিবার ছাড়া আর কাউকে মারামারি করতে দেখিনি তবে মারামারি থামাতে আসছিলো অনেকেই।এজাহার ভুক্ত অপর সাক্ষী চা দোকানদার লিটন বলেন,আমি চা অন্য দোকানে দিয়ে ফিরে এসে দেখি মারামারি হয়েছে গোবিন্দ সাহা মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেখানে কেষ্ট সাহার পরিবারের লোকজন লাঠি হাতে দাড়িয়ে ছিলো এছাড়া অন্য কেউ মারামারি করেনি।এদিকে মামলার ৪ আসামি সুবাস বিশ্বাস, সুধাংশু বিশ্বাস, উজ্জ্বল ও প্রভাস এর পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান,ঘটনাস্থলে না থেকেও তারা মামলার আসামি হয়েছে। এই মামলা থেকে তারা অব্যাহতি চান।এই মামলার এজাহার ভুক্ত ১ নং আসামি শিমুল সাহা ওরফে গোপাল সাহাকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহম্মদপুর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ রাসেল হোসেন।
তবে এলাকাবাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।এঘটনায় যেন কোনো নিরাপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হয় সেটা অবশ্যই প্রশাসনের নিকট দাবি এলাকাবাসীর।অন্যদিকে মামলার বাদী ও নিহত গোবিন্দ সাহার পুত্র গোপাল সাহা তার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেছেন।
সুজন মাহমুদ
ব্যুরো প্রধান,খুলনা।
১৮/১২/২৩