বিষয় ঃ একজন শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিক, সমাজসেবক মুক্তিযোদ্ধা, কাজী ছায়েমউদ্দিন!
লেখক ঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম (কবি লেখক গ্লোবাল পলিটিক্স বিশ্লেষক ও লেখক)
বঙ্গবন্ধু জন্ম নিয়েছিলেন অজপাড়াগাঁয়! বিকশিত হয়েছিলেন সূর্যের মত কিরণ ছড়িয়ে! সেই ক্ষণজন্মা পুরুষ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রে দীক্ষিত যারা হয়েছিলেন তার বাড়ীর অনতিদূরে তেমন সহস্র জনের ভিতর শামসুদ্দিন সিকা, কাজী সায়েম উদ্দিন আমার শিক্ষাগুরু, রাজনৈতিক হাতে খড়ি তাদের কাছ থেকে ! দু’জনই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন, নামেই পরিচিত ছিলেন জাতির জনকের কাছে।
“কাজী ছায়েম” ছিলেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মোল্লাহাট থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মপরায়ন নীতিবান, একজন মানুষ।
আমার তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, নাট্য পরিচালক, সভা-সমাবেশে শামসুদ্দিনের সহযাত্রী ছিলাম তার অতিব আগ্রহে। চষে বেড়িয়েয়ছি মোল্লা হাট থানার আনাচে কানাচে প্রগতিশীল রাজনীতি প্রচারে। তিনি আমৃত্যু থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি ছিলেন!
ততকালীন আইয়ুব মন্ত্রী সভার সম্ভবত বানিজ্য মন্ত্রী খুলনার খান এ সবুর খানের চির শত্রু, বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব “শামসুদ্দিন সিকার” একান্ত স্নেহভাজন ঘনিষ্ঠ জন ছিলেন কাজী ছায়েম। একই ভাবে শামসুদ্দিন ছিলেন “বঙ্গবন্ধুর” স্নেহভাজন!
বড়বাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো সারা থানার ভিতর সংস্কৃতি ও রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু! আমাকে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ছাত্রলীগে যোগদান করিয়েছেন দুই আনা টিকিটে! স্কুলে থিয়েটার নাটক বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন “সিকা” কিন্ত সংগঠক ছিলেন “কাজী ছায়েম উদ্দিন “! নাটকের রিহার্সাল সহ মঞ্চস্থ মঞ্চসজ্জা, টিকিট সেল করে স্কুলের ফান্ড বৃদ্ধি ছিলো কাজী ছায়েম উদ্দিনের উপর ন্যাস্ত! তার অভিনেতা অভিনেত্রী নির্বাচনে আমাকে বরাবর মেয়ে সেজে নায়িকার অভিনয় করতে হতো। তখন কনজার্ভেটিভ পরিবারের মেয়েরা অভিনয় জগতে পা রাখতে পারতো না সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, আজও কি তার উন্নতি ঘটেছে? হিজাব নেকাব বোরকা বেড়েছে প্রগতিশীলতা মনের প্রস্হতা তেমন ডানা মেলে নাই। বৃদ্ধি পায় নাই কুরআন গীতার ইসলামি মুসলমান ও হিন্দু বরং পদ পদবী বাগিয়ে নিতে সেই অজপাড়াগাঁয় সুদ ঘুষ দেহ দান স্বীকৃতি পেয়েছে মা-বাবা স্বামীর জ্ঞাতসারে অথচ নাটক করতে বললে ধর্মের লেবাস টোটার ভয়ে কেউ রাজী হবে না! সাংস্কৃতিক প্রগতিশীলতা আমার আমল থেকে দুই হাজার শতাব্দী তে ও তেমন বৃদ্ধি পায় নাই!
কাজী ছায়েম ছিলেন শিক্ষক হিসাবে কড়া প্রশাসক, ছাত্র বন্ধু, গরীব ছাত্রদের আর্থিক ছাড় পাড়ের সুপারিশ ততকালীন প্রধান শিক্ষক কে তিনি ই করতে পারতেন। স্কুল
ডিবেট, নাটক, আবৃত্তি, রাস্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন, খেলাধূলা তার উপর ন্যাস্হ ছিলো! কাজী ছায়েম ও শামসুদ্দিনের সাথে ছুটেছি “মাটিভাঙা কমিউনিস্ট নেতা মনোরমা বসুর (মাসি মা) জনসভায়,” অতুল নগর কলেজ করার মাটি কাটতে! সংক্ষিপ্ত তার রাজনৈতিক জীবন ততপরতা কেমন ছিলো আমার নিজ চোখে দেখা ও আমার সম্পৃক্ততা উল্লেখ করলাম শুধু!
তার হাতে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার,
ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি কর্মকর্তা, সচিব, সেনা অফিসার! উল্লেখযোগ্য এএসপি মনোয়ার হোসেন, সচিব মমতাজারা সাকুর আহম্মেদ, নির্বাচন কমিশনার মনিরুজ্জামান ইত্যাদি। আমরা যারা দেশবিদেশে সুনামের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে জীবনের আয় রোজগার দিয়ে আমাদের পশ্চাৎপদ পরিবার কে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি সেখানে শামসুদ্দিন, মোকসেদ মিয়া, কাজী ছায়েমের মত ব্যক্তির জ্ঞান লব্ধ শিক্ষা প্রতিপদে স্মরন হয়েছে!
কাজী ছায়েমউদ্দিন ১৯৭৫ সালের ১২ ই ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহ –), আমি ব্যক্তিগত ভাবে সংবাদ পেয়ে ছুটে যেয়ে লাশ দেখতে পাই নাই। ততক্ষণে গোপালগঞ্জের জনৈক ডাক্তার আঃ খালেক ও পরান পুর গ্রামের ডাঃ আশরাফ তার লাশ দাফন কাফনের জন্য আজীমপুর গোরস্থানে নিয়ে গিয়েছেন! চিকিৎসা বিজ্ঞান তখন এতটা উন্নত ছিলো না। সামন্য পেটের আলসার অপারেশন সাকসেসফুলি না হওয়ায় তিনি মৃত্যু বরন করেন। আজ হার্ট কিডনী অপারেশন ও ৮০/১০০% সাকসেসফুল হচ্ছে নিজ দেশে।
উল্লেখ্য, মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৩৬ বছর।
মৃত্যু কালে তিনি তার সহধর্মিণী জমিলা বেগম, দুই ছেলে ও এক কন্যা রেখে গেছেন! তার বড় ছেলে একজন সুযোগ্য সন্তান পিতার মতই শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত মানসিকতার ব্যক্তিত্বর অধিকারী হয়েয়ছেন। তার সুযোগ্য সন্তান “কাজী নূরুলজ্জামান বাদশাহ” বিএসএস (সন্মান), এমএসএস রাস্ট্র বিজ্ঞান। তিনি বাবার মত রাজনীতিক ও সমাজ সেবক ধারার মত-পথের মানুষ। তিনি ছিলেন সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, দৌলতপুর, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শহীদ তিতুমীর কলেজ হল শাখা ! চাকুরী ব্যবসা নিয়ে তিনি ঢাকা স্হায়ী হলেও পিতৃ এলাকায় নিজ গ্রাম ইউনিয়নের একজন দানবীর, সমাজ সেবক ও কৃতিমান পিতৃ সন্তান!
বাবার মৃত্যু বার্ষিকী তিনি প্রতিবছর স্মরনীয় ভাবে পালন করেন!