দীর্ঘদিন ডলার ও ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান অস্বাভাবিক কমায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে বাণিজ্য ও ভ্রমণ খাতে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি কমায় অর্ধেকে নেমেছে আমদানি—রফতানি। একইভাবে কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রীর যাতায়াত। এদিকে আমদানি কমায় গত ৪ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেনাপোল কাস্টমসে রজস্ব কমেছে ২৪০ কোটি টাকা। তবে এ অবস্থা উত্তরণে রফতানি বাড়ানোর পরমর্শ দিচ্ছে ব্যাংক।
বাণিজ্য সংশিষ্টরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত—বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত হয় সবচাইতে বেশি। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৪৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ২৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়। আর চিকিৎসা, ব্যবসা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী। তবে গত বছর থেকে শুরু হওয়া চলমান বৈশিক মন্দা এখনও বিরাজ করায় দিন দিন ডলার ও রুপির বিপরীতে কমে আসছে বাংলাদেশি টাকার মান।
৩ মাস আগে বাংলাদেশি ১শ টাকার বিপরীতে ৭৭ রুপি মিললেও বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ রুপি। আর ১শ ডলার কিনতে ১০ হাজার ৬০০টাকার স্থলে এখন গুণতে হচ্ছে ১২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এতে লোকশানের ভয়ে অনেক আমদানিকারক ব্যাংকে এলসি কমিয়েছেন। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকে যাচ্ছেন না ভারতে। চলতি ২০২৩—২৪ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত ৪ মাসের জন্যে এ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক মন্দায় আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা গেছে ২৪০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে চাহিদা মত এলসি দিচ্ছে না। এতে কমেছে আমদানির পরিমাণ।
ভারতগামী বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রুবেল হোসেন জানান, বাংলাদেশি টাকার মান কমায় লোকশান হচ্ছে। জরুরি দরকার তাই সংকট সময়েও বাধ্য হয়ে যাচ্ছি।
আমদানিকারক উজ্বল বিশ্বাস জানান, ডলারের সংকটে চাহিদা মত পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছেনা। ব্যাংক নানান অজুহাত দেখিয়ে এলসি খুলতে বিমুখ করছে। স্বাভাবিক সময়ে মাসে ৮ থেকে ১০ টি পণ্য চালান আমদানি করেছি আর এখন ৩ টির বেশি সম্ভব হচ্ছেনা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বৈশ্বিক মন্দার মারাত্মক বিরুপ প্রভাবের মুখে পড়েছে বাণিজ্য। বর্তমানে আমদানির পরিমাণ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
বেনাপোল আমদানি—রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, ব্যাংক চাহিদা মত এলসি দিতে পারছেনা। কিছু এলসি দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাজের ধীরগতিতে পণ্য আমদানি করতে ৩ মাস সময় লেগে যাচ্ছে।
মঈন উদ্দীন
এডিপি বাংলা
যশোর।