কুয়াকাটায় রাতভর আরাধনা শেষে ভরা পূর্ণিমা তিথিতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যার্থীরা নেমে পড়েন সাগরে পুণ্যস্নানে। জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সোমবার সকালে সৈকতের নোনা জলে গা ভাসিয়ে এ পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। স্নানের আগে মোমবাতি, আগরবাতি, বেল পাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন। এ সময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। এছাড়া সৈকতে বসে অনেক মানতকারীরা মাথান্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ডদান করেছেন । পরে ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করেন হিন্দুধর্মালম্বীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো অঘটন ছাড়াই হাজার হাজার মানুষের সমাগমের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেছেন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় সংগীতানুষ্ঠানের। সৈকতের পার ঘেঁষে বসে মেলা। হিন্দু পুণ্যার্থীরা কুয়াকাটার ‘রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম’ প্রাঙ্গণে রাতভর নামকীর্তনসহ অন্যান্য ধর্মীয় আচারে অংশগ্রহণ করেন। সারা রাত জেগে তারা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য পাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুণ্যার্থীরা পুণ্য স্নানের ক্ষণটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। হালকা ঠাণ্ডায় সোমবার সকালে স্নানের সময় অনেকে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে নেমে পড়েন সাগরের জলে।
হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের এমন দিনের জন্যই তারা অপেক্ষায় থাকেন। রাস উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছরই পুণ্যার্থী, ভক্তদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে অবরোধের কারণে দূরপাল্লার বাস তেমন চলাচল না করায় পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের আগমন কিছুটা কম হয়েছে।
পুণ্যস্নান শেষে কথা হয় মিনতি রানির সাথে তিনি বলেন, ভগবানের কৃপা লাভ করার জন্য পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। নিজের কাছেও ভালো লাগছে। নিরাঞ্জন মাঝি নামে একজনকে সৈকতে বসে মাথা ন্যাড়া করতে দেখা গেল। তার কাছ থেকে জানা গেছে, সে বেশ কিছু দিন অসুখে ভুগেছেন। তার মানত ছিল, অসুখ ভালো হলে পূর্ণিমার তিথিতে রাস পূজার সময় কুয়াকাটায় গিয়ে মাথা ন্যাড়া করবেন। তাই সেই মানত পালন করেছেন।
কুয়াকাটার শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেন, সকলের সহযোগিতায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এ উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া মদনমোহন সেবাশ্রমের যুব কমিটির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র দাস জানান, কুয়াকাটায় পুণ্যস্নান শেষ করে পুণ্যার্থীরা মদনমোহন সেবাশ্রমে পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় আসবেন। এছাড়া ১৭ জোড়া রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন।
মহিপুর থানার ওসি মো. ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, কুয়াকাটায় পুণ্যস্নান উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।